বাউফলে প্রতিবন্ধী আনোয়ারের পথ চলা

 বাউফলে প্রতিবন্ধী আনোয়ারের পথ চলা

বাউফল(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি:  খাতার উপর উপুড় হয়ে লিখতে হয়। পরীক্ষার প্রশ্নও পড়তে হয় তেমন করে। ডাক্তারের দেয়া চশমাতেও চোখে দেখছে না সে। কারণ তাঁর বাম চোখে একদমই দেখতে পায় না। ডান চোখে অনেক কষ্ট করে কোন রকম একটু দেখতে পায়। পরিবারও দরিদ্র। অর্থাভাবে চলছে না তার চিকিৎসা খরচ। এত সব বাধা পেড়িয়ে এবছর দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করছেন এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার কালাইয়া রাব্বানিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা কেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ওই  পরীক্ষার্থীর নাম আনোয়ার হোসেন। সে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। স্বাভাবিক জীবন যাপন যেখানে অসম্ভব, সেখানে লেখাপড়া করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অদম্য এই  প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। তার বাড়ী পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়নের বাহির দাশপাড়া গ্রামে। বাবা কালাম চৌকিদার একজন রাজমিস্ত্রী। দৈনিক আয়ের মানুষ।  মায়ের নাম জাহানারা বেগম। ছয় ভাই বোনের মধ্যে আনোয়ার সবার ছোট। দারিদ্র্যের বাধা উপেক্ষা করে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি । ২০১৪ সালে তিনি পশ্চিম বাহির দাশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খেকে সমাপনী পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ন হয়ে ২০১৫ সালে চরআলগী দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ-৩.০০ পেয়ে জেডিসি পাশ করেন । ওই মাদ্রসা থেকেই এ বছর দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছেন তিনি।
আনোয়ার বলেন, অভাবের সংসারে আমার মা-বাবা ও বড় ভাইয়েরা আমার জন্য যা করছেন , তাঁদের ঋন কোন দিন শোধ করতে পারব না। আমি পরিবারের জন্য কিছু করতে চাই। আমি প্রতিবন্ধী হলেও কাজ করে বাঁচতে চাই। সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
আনোয়ারের বাবা কালাম চৌকিদার বলেন,আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই এক চোখে দেখে না । অন্য চোখ দিয়ে দেখতেও তার খুব কষ্ট হয়। অভাবের সংসার আমার । নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাই আমার ছেলের চিকিৎসা খরচ বহন করার পাশাপাশি লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিযে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন আর চিকিৎসা খরচ চালাতে পারছি না। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারিভাবে কোন ভাতা পেলে সেটা দিয়ে আমার ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো যেত। কিন্তু তাও পাচ্ছে না। চিকিৎসকরা বলেছেন  আনোয়ারের দু’চোখেই  কর্নিয়ায় সমস্যা রয়েছে। অপারেশন করা গেলে আনোয়ার দৃষ্টি ফিরে পাবে। তবে তাতে ৩ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। এত টাকা আমার পক্ষে সংগ্রহ করা একেবারেই অসম্ভব। তাই আমার ছেলের দৃষ্টি ফিরে পেতে সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহব্বান জানাই। চরআলগী দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবু সাঈদ মোঃ মুছা বলেন, আনোয়ার খুবই শান্ত স্বভাবের ছাত্র। তাঁর লেখাপড়া শেখার আগ্রহ দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। মাদ্রাসার পক্ষ থেকে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও সব বাধা পেড়িয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজের  বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আনোয়ার চোখের আলো ফিরে পেতে পারে।